*একটি অপরাজেয় ভালোবাসার শেষ অধ্যায়* লেখা: অনিক হাসান



পহেলা জানুয়ারি ২০১৮ সুইটির ১৮তম জন্মদিন।

ভেবেছিলাম দিনটা অনেক সুন্দর ভাবে উদযাপন করব। 

ভেবেছিলাম গতবছরের ন্যায় এবছরও রাত ১১:৫০ এ সুইটিকে কল দিয়ে ১২টায় তারে উইস করব।

অর্থাৎ পুরাতন বছরেও তার পাশে থেকে তার নতুন বছরেরও সংঙ্গী হওয়া।


৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ আমি রাত ১১টা থেকে তার মোবাইলে কল দিয়েই যাচ্ছি কিন্তু তার মোবাইলে কল আর যাচ্ছে না।

দেখতে দেখতে রাত ১২টা বেজে গেল তারপরেও কল ঢুকল না।

আমি এসএমস দিলাম তাও সেন্ট হল না।


সারারাত আমি তার ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু একটা কলও ঢুকল না।

সারারাত ঘুম নেই বুঁকের মাঝে শুধু ক্ষোভ বেড়েই চলছে।


ঠিক ২ দিন পর সুইটির কল।


আমি তার কোন কথা না শুনেই তাকে ইচ্ছা মত বকা দিতে শুরু করে দিয়েছি।


আমি তাকে কোন কথা বলার সুযোগই দেই নি।

সুইটিও রাগে কল কেটে দেয় আর এসএমএস দিয়ে বলে তার আম্মুর ফোনটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

আসলে সুইটির কোন নিজের ফোন নেই।

ও ওর আম্মুর ফোন দিয়েই আমার সাথে কথা বলে।


অতঃপর আবারও আমাদের ঝগড়া এই জন্মদিনকে কেন্দ্র করে।

আমাদের রিলেশন ৩ বছরের।


এই ৩ বছরে সব থেকে বেশি যেটা হয়েছে সেটা হল ঝগড়া।


যতই ঝগড়া হতো না কেন রাতে কেউ কারো কথা না শুনে ঘুমাতে পারতাম না।


হয়তো আমাদের ভালোবাসার আরো অনেক গল্প আগে পড়েছেন।


[আজকে বলব আমাদের ভালোবাসার শেষ অধ্যায়।

কি চমকে গেলেন শেষ অধ্যায় শুনে??

শেষ অধ্যায় মানে যে ব্রেক আপ নয় তা এই গল্পটি সব পড়লে বুঝতে পারবেন।]


 ২০১৮ সালের সেই শুরু থেকেই আমাদের জন্য বছরটা অশুভ।

রোজই আমাদের ঝগড়া হয়।


যেহেতু সুইটির আম্মুর ফোন নষ্ট তাই সে তার আব্বুর ফোন থেকে পালিয়ে পালিয়ে মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দিত।


কিন্তু আমি মেনে নিতাম না।

আমার কথা হচ্ছে আমার সাথে তোমার প্রতিদিন কথা বলতে হবে।


আমি তো বুঝতাম না তার আম্মুর ফোন সত্যি নষ্ট তাই আমি তার নাম্বারে রোজ ফোন দিয়ে ফোন অফ পেতাম আর তার বাবার ফোনে কল দিয়ে রোজ বকা খেতাম।


সুইটি বার বার আমাকে নিষেধ করত আমি যাতে সে কল দেয়ার আগে তার বাবার ফোনে আর কল না দেই ।

শুধু শুধু আমি কেন কল দিয়ে বকা খাই এই জন্য সুইটি রাগ।


আমি বললাম তোমার জন্য বকা কেন সব করতেই রাজি।


এখন আর আমাদের বেশি কথা হয় না ওর বাবা ওরে ফোন ধরতে দেয় না।


আর ওর জন্য আগে থেকেই প্রতি শুক্রবার বিয়ের প্রস্তাব আসত।


খুবই চাপের মধ্যে ছিল ও আর আমিও কিছু করতে পারতেছিলাম না আমার পরিবার ও ওরে মেনে নিতে পারছিল না।

আর আমিও নিজের পায়ে এখনও দাড়াতে পারা শিখি নাই। সবে মাত্র অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি।


অনেক দিন হয়ে গিয়েছে আমাদের মধ্যে কথা হয় না।


আমি ভার্সিটি বন্ধে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম।

আমি আগে থেকেই অসুস্থ আমার হার্টে সম্যসা।

বাড়ি বসে একদিন রাত ১.৩০ টার দিকে আমার ব্যথা উঠে।


আমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।


হয়ত আমার সময় খুবই কম ছিল।


আমি সারারাত অনেক কাঁদলাম।


এর পরের দিন সুইটি কল দিয়ে বলল ওর ফুফাত ভাইয়ের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।


আমি আমার কথা চিন্তা করে ওর কথা চিন্তা করে দেখলাম হয়ত আমি আজ আছি কাল নেই কিন্তু আমার জন্য ওর জিবন নষ্ট হতে দিব না।

আমি তাকে বললাম তুমি বিয়ে টা করে নাও আমার কথা ভেবো না।


এইটা শুনে ও কল কেটে দিল।


আমি প্রতিদিন কল করে যাচ্ছি কিন্তু কারো নম্বরে কল যাচ্ছে না।

কিছুতেই ওর সাথে কথা বলতে  পারতেছিলাম না।


প্রায় ১ মাস পর  সুইটির কল।


ও হয়ত জানে না আমি কেন তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি।

ও শুধু কান্না করে বলতেছে তুমি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিলে।


আমি এর পরে সব খুলে বলেছি।

কিন্তু ও কিছু বিশ্বাস করছে না।


আর ও ঠিক করেছে আমার সাথে আর কোন দিন কথা বলবে না।


ও বিয়েতে মত দিয়ে দেয়।


কিন্তু আমি আর পারতেছিলাম না আমি  হয়তো ভুল বসোত কথাটা বলে ফেলেছি তার জন্য আমি কি তাকে সত্যি সত্যি হারাতে হবে?


আমি রোজ ফোন করতাম ওর কাছে মাফ চাইতাম কিন্তু ও কিছুতেই আমার কাছে ফিরে আশার জন্য রাজি হত না।


প্রতিদিন আমি তাকে এভাবে ৬ মাস এর মত ফিরে আশার জন্য বলেছি।


একদিই সে আমাকে সব খুলে বলল সে রাজি না কিন্তু তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে  দিচ্ছে।


যদি সে এ বিয়ে না করে তাহলে তার বাবা মা বিষ খাবে তাই সে তার বাবা মায়ের জন্য বিয়েতে মত দিয়েছে।


আর ওর বাবা মা চায় না আমার সাথে যেন ও কিছুতেই কথা বলতে পারে।

এ জন্য ওর প্রতি তারা বিশেষ নজর রাখে।


আমি সুইটির কাছে আমার ভালোবাসা টুকু ভিক্ষা চেয়েও পাইনি ।

পরে শুধু বলেছিলাম তুমি তো আর আমার হবে না তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কি??


তোমার যেদিন বিয়ে হবে ঠিক সেদিনই হবে আমার শেষ দিন।


ও বারবার আমার কাছে হাত জোর করে বলতেছে আমি যাতে কিছু না করি ।


ও বিয়ের পরেও আমার সাথে কথা বলবে বলেছে।


কিন্তু হঠাৎ করেই সুইটি উধাও।


আমি কোথাও ওরে খুঁজে পাচ্ছি না।


দিনের পর দিন কল করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছে

কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না।


আমিও এতদিনে কিছুটা মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি।


কয়েক দিন পর  সুইটির আম্মুর কল।

কাঁদো কাঁদো গলায় সে বলেতেছে আমাকে মাফ করে দিও বাবা।


আমি বললাম কেন?

সে বলল আমরা  তোমার সুইটিকে বাঁচাতে পারলাম না।


একথা শুনে আমার হাত থেকে মোবাইল পরে গিয়েছে।


আমার হাত পা শুধু কাপতেছে।


কেন আমার সাথে এমনটা হল??

ও সবসময় আমাকে বলত আমি তোমার আগে চলে যাব।

আর সে তার কথা রেখেছে।

কি জানতে চান সুইটিকে তারা কেন বাঁচাতে পারল না???

তাহলে শুনুন শুক্রবার সুইটির বিয়ে ঠিক।

বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন।

আমাকেও জানতে দেয়া হয়নি ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

বিয়ের দিন দুপুর ১২টায় সে বিষ খেয়ে ফেলেছে।


কি বাস্তবতা অনেক সহজ তাই না?????


চাইলেই আমি সুইটিকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারমাত।

কিন্তু কেন যাইনি??

গেলে কি হতো??

গেলে হয়তো আমার দুজন সুখী হতে পারতাম।

কিন্তু আমাদের যে মানুষগুলা ভালোবাসে যারা আমাদের এত বড় করেছে তাদের অবস্থা কি হতো?

তারা কি ভালোথাকতে পারত?

আমাদের  কোনও দিনও ক্ষমা করত না তারা।


আর আমারা তো ভালোবেসেছি।

কোন অন্যায় তো করি নি।

তাহলে আমারা কেন পালাব?

এতে আমাদের ভালোবাসাকে অপমান করা হত না???


প্রিয়জন হারানোর কষ্ট অনেক আমি চাই না আর কারো প্রিয়জন এভাবে হারিয়ে যাক।


আমি জানি না আমি কতদিন এভাবে বেঁচে থাকব।

বেঁচে থাকলেও হয়তো বেঁচে থাকব একটি জীবন্ত লাশ হয়ে।

সবাই দোয়া করবেন সুইটির জন্য এবং আমার জন্য।


----------সমাপ্ত----------

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ