*প্রথম ভালোলাগা* লেখা অনিক হাসান



 ২০১৩ সালের কথা তখন ৯ম শ্রেনীতে পড়তাম।

আমি যেই প্রাইমারি স্কুল থেকে পাস করে বের হয়েছি সেই স্কুলেরই বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতা অনু্ষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়া হল।

স্কুলটি আমার বাড়ির পাশেই ছিল আর যখন আমি ওই স্কুলে পড়তাম প্রতিবারই আমি ফাস্ট হতাম শুধু ১ বার ২য় হয়েছিলাম 

৩য় শ্রেনীতে।


বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতার দিন।

তখন ছিল ফেব্রুয়ারি মাস তেমন শীত ছিল না ওইদিন।


আমি মাঠের এক কর্নারে দাড়িয়ে খেলা দেখছিলাম আর যারা প্রথম, দ্বিতীয় ,তৃতীয় হত তাদের মঞ্চে দিয়ে আসতাম। অর্থাৎ আমি ছিলাম বলেনটিয়ার।


হঠাৎ আমার পাশেই একটি মেয়েকে দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।

তখন হয়ত ক্রাশ শব্দটি প্রচলিত ছিল না।


মোটকথা মেয়েটিকে আমার ভালোলেগে যায়।

পরবর্তীতে ওর পেছনে নেটওয়ার্ক লাগিয়ে জানতে পারি আমি যে স্কুলে ৯ম শ্রেনীতে পড়ি ও সেই স্কুলেই ৭ম শ্রেনীতে পড়ে।


ওরে দেখলেই আমার বুকের ভিতর কেমন যেন ঝর শুরু হয়ে যেত।

ভয়ে কোনদিন ওর সামনে দাড়াতে পারিনি।


স্কুল যখন ছুটি হত তখন আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে একসাথে বাড়িতে যেতাম।

আমি যেই পথ দিয়েই বাড়ি যেতাম ও ঠিকই ওই পথ দিয়েই বাড়ি যেত।

ও যদি সামনে থাকত তাহলে আমি জোরে হেটে ওর আগে বাড়ি চলে যেতাম।

যাতে ও মনে করতে না পারে আমি ওর পিছনে ঘুরি।

ও আমাকে দেখলেই মুচকি হাঁসি দিত।


ও হয়ত বুঝত আমি ওরে পছন্দ করি।


যখন আমার বন্ধুরা জানতে পারল আমি ওই মেয়েটাকে পছন্দ করি তখন ওরা আমাকে যত বারই মেয়েটার সামনে নিয়ে গিয়েছে আমি ততবারই দৌড়ে পালিয়েছি।


আমার কেমন যেন ভয় লাগত।

ভয় লাগত বলতে আমি আগে কখনই কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি।

আমার ক্লাশের মেয়েদের সাথেও না।


একবার বিকালে আমি মাঠে খেলতেছিলাম আর পিছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আমার খেলা দেখছে।

আমি কি করব তখন বুঝতে ছিলাম না 

আমি দৌড়ে বাড়ি চলে গিয়েছি ভয়ে।


আরেক দিন আমি বাজারে ক্রিকেট খেলা দেখতেছিলাম বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ।

ঠিক তখনই দেখলাম মিথিলা ওর খালাকে নিয়ে বাজারে আসছে।

ও হ্যাঁ মেয়েটির নাম ছিল মিথিলা বলতে ভুলেগিয়েছিলাম।

ও দূর থেকে আমি যেই দোকানে ছিলাম ওই দোকানটা ওর খালাকে দেখাচ্ছিল আমি ভাবলাম আমাকে দেখাচ্ছে আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম।

আর মনে মনে বলতে লাগলাম আমি তো কিছুই করি নাই তাহলে আমাকে কেন দেখাচ্ছে

আমি তখন এক দৌড়ে বাড়ি চলে গেলাম।

হাপাতে হাপাতে আমার আপুর সামনে পড়লাম।

ও বলল কি হইছে তুই এত দৌড়াচ্ছিস কেন।

তখন আমার চাচাতো ভাউ শাহীন আপুকে বলল ও যেই মেয়েকে পছন্দ করে তাকে দেখেই ও দৌড়ে পালিয়েছে।


এই কথা শুনে ওরা সবাই কি হাসাহাসি করছে।


পড়ে মনে পড়ল আমি যে দোকানে দাড়িয়ে খেলা দেখছিলাম ওইটা ছিল কাপড়ের দোকান আর ও হয়ত ওর জামা বানানোর জন্যই ওর খালাকে ওই দোকান দেখাচ্ছিল।


যখনই ওই কথাগুলো আমার মনে পরে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলি।


আমরা যে স্কুলে পড়তাম আমার বাবাও ওই  স্কুলের টিচার ছিল।


ফলে ভয়টা আমারই বেশি ছিল।

আমি সবসময় এইটাই ভাবতাম যদি আমি মেয়েটাকে আমার কথাগুলো বলি তাহলে হয়ত পুড়ো স্কুলের সবাই জেনে যাবে আর এই অল্প বয়সেই একটা দাগ লেগে যেত।

আমার বাবার সম্মানহানী হত।


লোকে বলাবলি করত বাপে হইছে মাস্টার আর তার ছেলে হইছে আস্ত ভন্ড।


অর্থাৎ আমি ইচ্ছে করলেই অনেক কিছু করতে পারতাম না।


শুধুমাত্র বাবার কথা মাথায় রেখেই আজও পর্যন্ত মেয়েটাকে আমার মনে কথা বলতে পারিনি।


এতদিনে ওর কথা ভুলে গিয়েছি।

শিখে ফেলেছি কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা ভালোলাগা।


তখন যেহেতু ক্রাশ শব্দটি প্রচলন ছিল না সেহেতু ও আমার প্রথম ভালোলাগাই ছিল।


দেখতে দেখতে ৫টি বছর কেটে গেল।


আমিও কলেজ লাইফ শেষ করে ভার্সিটি লাইফে প্রবেশ করেছি।


কিছুদিন আগে ভার্সিটি লাইফের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম ভিক্টোরিয়া পার্কে হঠাৎ করেই দেখতে ঠিক মিথিলার মত একটা মেয়েকে দেখলাম।

সাহস নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি মিথিলা???


উত্তর আসল নাহ।


অতপর আমি আবার নিজেরই অজান্তেই হেসে ফেললাম তার কথা মনে পড়ে।


---------------সমাপ্ত---------------

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ